কারো স্ট্রোক হয়েছে মনে হলে তাঁকে অতি দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান : চিকিৎসক সমাজ


হীরক মুখোপাধ্যায় 

কলকাতা (৩০ অক্টোবর '২৫):- "কারো স্ট্রোক হয়েছে মনে হলে তাঁকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে চাইলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান," 'বিশ্ব স্ট্রোক দিবস' (World Stroke Day) উপলক্ষ্যে গতকাল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই ভাষাতেই দেশবাসীকে সতর্ক ও সচেতন করলেন দেশের চিকিৎসক সমাজ।

চিকিৎসক সমাজ দেশবাসীকে সতর্ক করে জানিয়েছেন, "মাথায় রাখবেন এই মুহূর্তে সমগ্র বিশ্ব সহ আমাদের দেশ ভারতেও অতি দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে স্ট্রোক। ১৯৯০ সালে ভারতে যেখানে মোট, ৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষের স্ট্রোক হয়েছিল, সেখানে ২০২১ সালে ১২ লাখ ৫০ হাজার মানুষের স্ট্রোক হয়েছে।"

স্ট্রোকের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে গিয়ে চিকিৎসক সমাজ বলেছেন, "স্ট্রোক হলে প্রতি মিনিটে শরীরের ২ লাখ নিউরন ধ্বংস হতে থাকে, ফলতঃ অতি দ্রুত আমাদের শরীরের কার্যকলাপ নষ্ট হতে শুরু করে। এই পর্যায়ে রোগীকে বাঁচাতে হলে বা সুস্থ করে তুলতে চাইলে অতি দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে আধুনিক চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।"

স্ট্রোক সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করতে গিয়ে দেশের অন্যতম অগ্রণী স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তথা 'ইণ্ডিয়ান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন'-এর অধ্যক্ষ পি বিজয়া (Dr. P Vijaya, President, Indian Stroke Association) জানিয়েছেন, "কোনো আগাম সতর্ক বার্তা ছাড়াই প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জনের ব্রেন স্ট্রোক (Brain Stroke) হয়ে থাকে।"

জনগণকে সচেতন করতে গিয়ে ভারতীয় চিকিৎসক সমাজ আরো জানিয়েছেন, "যদি দেখা যায় বিশেষ কিছু কারণে কোনো ব্যক্তি শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছেন না, দৃষ্টিশক্তি কমে যাচ্ছে, মুখ ঝুলে পড়ছে, দুই হাত শরীরের দুই পাশে মেলে রাখতে পারছেন না, কথা জড়িয়ে যাচ্ছে তাহলে অতি শীঘ্র সেই ব্যক্তিকে নিকটবর্তী চিকিৎসালয় বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

স্ট্রোক সম্পর্কে বিশদে জানাতে গিয়ে ভারতীয় চিকিৎসক সমাজ জানিয়েছেন, "গত বছরের 'বি এম সি পাবলিক হেলথ স্টাডি' (B M C Public Health Study) অনুযায়ী শুধুমাত্র বায়ু দূষণের কারণেই বিশ্বের ২০ লাখ মানুষ স্ট্রোক জনিত কারণে মৃত্যু মুখে পতিত হন। এবং 'দ্য ল্যানসেট নিউরোলজি' (The Lancet Neurology)-র প্রকাশিত বিবৃতি অনুযায়ী, ভারতের মতো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রতিবছর প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন বায়ু দূষণের কারণে স্ট্রোকের শিকার হচ্ছেন।"

'বিশ্ব স্ট্রোক দিবস' সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে গিয়ে কলকাতার ডিসান হসপিটাল-এর চিকিৎসা বিভাগের নির্দেশক তথা চিকিৎসক সুজয়রঞ্জন দেব (Dr. Sujoyranjan Dev, Medical Director, Desun Hospital, Kolkata), বলেছেন "একটু সতর্ক ও সচেতন হলেই স্ট্রোকজনিত সমস্যা আটকে দেওয়া যেতে পারে।"

অন্যদিকে ডিসান হসপিটালের স্নায়ুরোগ বিভাগের বরিষ্ঠ পরামর্শদাতা চিকিৎসক মধুপর্ণা পাল (Dr. Madhuparna Paul, Sr. Consultant, Department of Neurology, Desun Hospital, Kolkata) জানিয়েছেন, "রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে ১ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে এসে জীবনদায়ী চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হলে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার বিষয়ে কিছুটা বেশি ভরসা রাখা যায়।"

বলে রাখা ভালো, স্ট্রোক সম্পর্কিত চিকিৎসা প্রণালী অনুসারে রোগীর শরীরে জমাট বাঁধা রক্তকে তরল করতে ৪.৫ ঘণ্টার মধ্যে যদি রোগীর শিরায় ওষুধ প্রয়োগ করা না যায় তাহলে ফল বিয়োগান্তক হতে পারে। 

এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা ভালো, মূলতঃ দু ধরণের স্ট্রোকের কারণে মানুষ অসুস্থ বোধ করেন। এর একটা হল 'ইস্কিমিক' অপরটা 'হেমোরেজিক'।

'ইস্কিমিক স্ট্রোক' (Ischemic Stroke) হলে শিরার মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়ে রক্ত প্রবাহে বাঁধা উৎপন্ন হয়। অপরদিকে রোগীর শরীরের দুর্বল শিরা উপশিরা ছিঁড়ে গিয়ে শরীরের ভিতর রক্তপাত শুরু হলে তখন মানুষ 'হেমোরেজিক স্ট্রোক' (Hemorrhagic Stroke)-এর শিকার হন।

Comments