হীরক মুখোপাধ্যায়
কোলকাতা (৫ সেপ্টেম্বর '২৪):- "কোলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক অবস্থা দেখে এখন মনে হচ্ছে, গতবছর অসুরকে ত্রিশূল মুক্ত করে বোধহয় ভুল করেছিলাম;" ঠিক এই ভাষাতেই আজ মনের ব্যথা ব্যক্ত করলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বীকৃতি প্রাপ্ত শিল্পী আভা ব্যানার্জি (Aava Banerjee, Enlisted Artisan, Government of West Bengal)। নিজের ভুল স্বীকার করে শিল্পী জানান, "ভুল সংশোধনের স্বার্থে এই বছর মহিষাসুরকে পুনরায় মায়ের পদতলে স্থান দিয়ে ত্রিশূল বিদ্ধ করে দিয়েছি।"
বলে রাখা ভালো, কোলকাতার ৫৩, টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের অধিবাসী এই শিল্পীর বাড়িতে গতবছর ক্লে পলিমার (Clay Polymer) দিয়ে প্রথম দুর্গামূর্তি (Idol of Goddess Durga) তৈরী হয়েছিল, শিল্পীর ভাষ্য অনুযায়ী, "শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয় বিশ্বের নিরিখে গত বছরই আমার হাত দিয়ে প্রথম ক্লে পলিমার দিয়ে দুর্গামূর্তি নির্মিত হয়েছিল।"
গত বছর দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে শিল্পীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, সাবেক রূপের বিপ্রতীপে মা যেন তাঁর চার সন্তান ও অসুরকে নিয়ে 'ঘরোয়া বৈঠক' (In-house Meeting)-এ ব্যস্ত।
মূর্তির দিকে একপলক তাকালেই মনে হচ্ছিল বাপের বাড়ি বেড়াতে এসে বিশ্রামকক্ষে একটা চৌকির উপর সন্তানাদি সহ অসুরের সাথে আলোচনা রত মা। অসুরও মায়ের পদতলের পরিবর্তে ত্রিশূল মুক্ত হয়ে মায়ের একপাশে হাসিহাসি মুখ করে বসে আছে।
'বিশ্বদর্পণ'-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গতবছর শিল্পী বলেছিলেন, "অন্যরকম ভাবনা রসে সমৃদ্ধ এই প্রতিমা বানাতে প্রথমে যথেষ্ট ভয় হচ্ছিল, যদি ধর্মীয় দর্শন বা ভাবনাকে মায়ের এই রূপ আহত করে সেই ভয়ে শঙ্কিত ছিলাম...।"
এই বছর 'বিশ্বদর্পণ'-কে নিজের শিল্পসামগ্রী দেখাতে দেখাতে তিনি জানিয়েছেন, "গত এক বছর ধরে সমাজের চারদিকে অসুরদের ভয়ঙ্কর আস্ফালন দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, অসুরকে ত্রিশূল মুক্ত করে ভুল করেছিলাম, তাই এইবছর পুনরায় মাতৃপদদলিত রূপে নির্মাণ করছি। অসুরের সামগ্রিক কার্যকলাপে বিরক্ত হয়ে মা অসুরের ডান হাতের উপর তাঁর বলিষ্ঠ পা তুলে অবস্থান করছেন।"
এই বছর 'বিশ্বদর্পণ'-কে নিজের শিল্পসামগ্রী দেখাতে দেখাতে তিনি জানিয়েছেন, "গত এক বছর ধরে সমাজের চারদিকে অসুরদের ভয়ঙ্কর আস্ফালন দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, অসুরকে ত্রিশূল মুক্ত করে ভুল করেছিলাম, তাই এইবছর পুনরায় মাতৃপদদলিত রূপে নির্মাণ করছি। অসুরের সামগ্রিক কার্যকলাপে বিরক্ত হয়ে মা অসুরের ডান হাতের উপর তাঁর বলিষ্ঠ পা তুলে অবস্থান করছেন।"
এই বছরের নির্মিয়মান মাতৃমূর্তির দিকে তাকালে মনে হচ্ছে এ যেন পশ্চিমবঙ্গেরই এক কল্পিত রূপ। পশ্চিমবঙ্গ যেমন শিল্প ও শ্রী রহিত অবস্থায় চালিত হচ্ছে, ঠিক তারই প্রতিবিম্ব রূপে মাতৃমূর্তি ডানদিকে বিরাজমান মাতা লক্ষ্মী ও গণেশ যেন মাতৃপ্রতিমা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করছেন। মা লক্ষ্মীর দিকে তাকালে মনে হচ্ছিল 'লক্ষ্মী ভাণ্ডার' নিঃশেষিত হয়ে যাওয়ার কারণেই যেন লক্ষ্মীর মধ্যে অলক্ষ্মী ভাবের সমাগম হয়েছে।
মায়ের বাম দিকে তাকালে দেখা যাবে দুর্গামূর্তির দিকে বেশ কিছুটা হেলে রয়েছে জ্ঞান তথা বিদ্যার দেবী সরস্বতী। এখানকার মাতৃপ্রতিমা দেখলেই যেকোনো ব্যক্তিরই মনে হবে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও নৈরাজ্যের ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে মা দুর্গা তাঁর এক হাত দিয়ে জ্ঞানদাত্রী দেবীর কর্ণাকর্ষণ করে যেন তাঁর সম্বিত ফেরাচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গ সীমাহীন বেকারত্বের মূর্তিমান প্রতীক রূপে কার্তিক যেন অনেকটা জৌলুষহীন হয়ে মায়ের পদতলে কাঁচুমাচু মুখে বসে আছে।
কোনো মূর্তিই এখনো সম্পূর্ণ রূপে তৈরী হয় নি, কিন্তু এরই মধ্যে শিল্পী তাঁর আপন মুন্সীয়ানায় দেবীর যে রূপকল্পনা করেছেন তা নিঃসন্দেহে কোলকাতার স্বনামধন্য সব মৃৎশিল্পীদের লজ্জায় ম্রিয়মান করে দেবে।
শিল্পীর কাছে দেবীর রূপকল্পনার ভাবনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শিল্পী জানিয়েছেন, "আমার সীমিত ক্ষমতা অনুসারে আরাধনা করার জন্যই এই মাতৃমূর্তি বানিয়েছি, এখনো নির্মান কাজ প্রায় ২০ শতাংশ বাকি রয়েছে। কে বা কোন দর্শক বা সমালোচক মাতৃমূর্তির ভিতর কী রূপ খুঁজবেন সেটা একান্তই তাঁর নিজস্ব বিষয়। তবে শিল্প যেহেতু কলা জগতের অন্যতম বিষয়, তাই কোনো সমালোচকের কোন সমালোচনা বা ব্যক্তিভাবনাকে ভুল বলা যায় না বা দূরে সরিয়ে রাখা মূর্খামি।"
গত বছরের মতো এই বছরেও আভা ব্যানার্জি-কে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর কন্যাতুল্য সহায়ক শর্মিষ্ঠা পাল (Sharmistha Paul, Assistant) জানিয়েছেন, "তুলো, সুতির শাড়ি ও দড়ি দিয়ে মূর্তির কাঠামো ও অবয়ব তৈরি করা হয়েছে, অপরদিকে মূর্তির মুখ ও হাত পা তৈরি হয়েছে ক্লে পলিমার দিয়ে।"
মায়ের বাম দিকে তাকালে দেখা যাবে দুর্গামূর্তির দিকে বেশ কিছুটা হেলে রয়েছে জ্ঞান তথা বিদ্যার দেবী সরস্বতী। এখানকার মাতৃপ্রতিমা দেখলেই যেকোনো ব্যক্তিরই মনে হবে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও নৈরাজ্যের ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে মা দুর্গা তাঁর এক হাত দিয়ে জ্ঞানদাত্রী দেবীর কর্ণাকর্ষণ করে যেন তাঁর সম্বিত ফেরাচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গ সীমাহীন বেকারত্বের মূর্তিমান প্রতীক রূপে কার্তিক যেন অনেকটা জৌলুষহীন হয়ে মায়ের পদতলে কাঁচুমাচু মুখে বসে আছে।
কোনো মূর্তিই এখনো সম্পূর্ণ রূপে তৈরী হয় নি, কিন্তু এরই মধ্যে শিল্পী তাঁর আপন মুন্সীয়ানায় দেবীর যে রূপকল্পনা করেছেন তা নিঃসন্দেহে কোলকাতার স্বনামধন্য সব মৃৎশিল্পীদের লজ্জায় ম্রিয়মান করে দেবে।
শিল্পীর কাছে দেবীর রূপকল্পনার ভাবনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শিল্পী জানিয়েছেন, "আমার সীমিত ক্ষমতা অনুসারে আরাধনা করার জন্যই এই মাতৃমূর্তি বানিয়েছি, এখনো নির্মান কাজ প্রায় ২০ শতাংশ বাকি রয়েছে। কে বা কোন দর্শক বা সমালোচক মাতৃমূর্তির ভিতর কী রূপ খুঁজবেন সেটা একান্তই তাঁর নিজস্ব বিষয়। তবে শিল্প যেহেতু কলা জগতের অন্যতম বিষয়, তাই কোনো সমালোচকের কোন সমালোচনা বা ব্যক্তিভাবনাকে ভুল বলা যায় না বা দূরে সরিয়ে রাখা মূর্খামি।"
গত বছরের মতো এই বছরেও আভা ব্যানার্জি-কে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর কন্যাতুল্য সহায়ক শর্মিষ্ঠা পাল (Sharmistha Paul, Assistant) জানিয়েছেন, "তুলো, সুতির শাড়ি ও দড়ি দিয়ে মূর্তির কাঠামো ও অবয়ব তৈরি করা হয়েছে, অপরদিকে মূর্তির মুখ ও হাত পা তৈরি হয়েছে ক্লে পলিমার দিয়ে।"
Comments
Post a Comment