হীরক মুখোপাধ্যায়
কোলকাতা (৩ অগস্ট '২৪):- পশ্চিমবঙ্গ সরকার যতই ঢাকঢোল পিটিয়ে 'এগিয়ে বাংলা'-র বিজ্ঞাপন করুক না কেন, জন্মহারের সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে অন্যান্য রাজ্যগুলোর থেকে অনেক পিছিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শাসিত পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal is trailing), এমনই এক কথা প্রকাশ্যে বেড়িয়ে এল 'সৃষ্টি ইনফার্টিলিটি ক্লিনিক' (Srishti infertility Clinic)-এর বার্ষিক সম্মেলনে (Annual Conference 2024)।সম্মেলনে জানানো হয়েছে, "ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভিসেস' (National Family Health Services)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০০ সালে ভারতবর্ষে জন্মহার ছিল ৩.৩৫ শতাংশ। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ২.১১২ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গের জন্মহার মাত্র ১.২ শতাংশ (Rate of Birth is just 1.2 % at West Bengal)
স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগে চিকিৎসারত দেশের বরিষ্ঠ চিকিৎসকদের একাংশের ধারণা, "সমগ্র পৃথিবী জুড়েই বর্তমানে সন্তানহীনতার সমস্যা বাড়ছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় জনসংখ্যা বাড়লেও (Number of Population is increased) জন্মহার (Rate of Birth is decreased) অনেক কমে গেছে।"
আজ কোলকাতায় 'সৃষ্ট ইনফার্টিলিটি ক্লিনিক'-এর বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের উদ্যোগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পঠনপাঠনরত তরুণ প্রজন্মের চিকিৎসকদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। এক দিনের এই কর্মশালায় কনিষ্ঠ চিকিৎসকদের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার খুঁটিনাটি সম্পর্কে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
আয়োজক সংস্থার বক্তব্য অনুযায়ী, "শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরষ্কার প্রাপ্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডাঃ দীপ্যমান গাঙ্গুলি, সৃষ্টির অধিকর্তা তথা বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুদীপ বসু, মুম্বাইয়ের চিকিৎসক নীতিন চৌবাল, ডাঃ স্মিতা প্যাটেল, ডাঃ খুরশিদ আলম, ডাঃ অভিনিবেশ চ্যাটার্জি, ডাঃ সুজয় দাসগুপ্ত প্রমুখ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দল হাতে কলমে তরুণ চিকিৎসকদের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় যেহেতু আলট্রা সোনোগ্রাফির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই অত্যাধুনিক ফিউচার আলট্রাসোনোগ্রাফি, এন্ডমেট্রিওসিসের চিকিৎসায় বাটারফ্লাই পেরিটনেক্টমি, ল্যাটেরাল পেলভিক ওয়ালের ইউরেথ্রা ডিসেকশন, ডুয়াল ট্রিগার ইন আইভিএফ , রোবোটিক সার্জারি ইন গায়নোকলজি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।"
সৃষ্টির অধিকর্তা তথা বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুদীপ বসু (Dr. Sujit Basu, Infertility Specialist & Director Srishti infertility Clinic) সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, "অন্যান্য অসুখের মত বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রেও শুরুতে চিকিৎসা করালে ভাল ফল পাওয়া যায়, খরচও তুলনামূলক কম হয়। আসলে জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে সন্তানধারণের সমস্যা বাড়ছে। । স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক উপায়ে সন্তান না হলে কিছু রুটিন টেস্ট করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। যেমন ধরুন কারুর হরমোনের তারতম্য অথবা কারুর টিউব ব্লক অথবা কোনও সিস্ট আছে। সেক্ষেত্রে এগুলির চিকিৎসা করলেই সন্তান ধারণ সম্ভব। যদি এই চিকিৎসা করে কোনও সুফল পাওয়া না যায় তখনই টেস্ট টিউব বেবি অর্থাৎ আইভিএফ এর সাহায্য নিতে হয়। বন্ধ্যাত্ব আসলে একটি মাল্টিফ্যাক্টোরিয়াল সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডিম্বাণু বা শুক্রাণুর অস্বাভাবিকতা, ফ্যালোপিয়ান টিউবের গোলমাল, এন্ডোমেট্রিয়াম লাইনিং-এর ত্রুটি অপর্যাপ্ত শুক্রাণু ইত্যাদি নানান সমস্যা বন্ধ্যাত্ব ডেকে আনে। আর্টিফিশিয়াল রিপ্রোডাক্টিভ টেকনিক বা 'এআরটি'-র সাহায্যে এই সমস্যাগুলিকে যতটা সম্ভব পাশ কাটিয়ে সন্তান ইচ্ছুক দম্পতির ডিম্বাণু ও শুক্রাণু সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে ভ্রূণ তৈরি করা হয়। সকলেরই এই বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার।"
Comments
Post a Comment