হীরক মুখোপাধ্যায়
কোলকাতা (২৬ জুলাই '২৪):- কিছু বিতর্ক নিয়েই গত ২২ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে এই বছরের কুনওয়ার যাত্রা (Kunwar Yatra 2024)। শ্রাবণ শিবরাত্রিকে মহিমান্বিত করার জন্য এইবছর এই যাত্রা চলবে আগামী ২ অগস্ট পর্যন্ত।পবিত্র কুনওয়ার যাত্রা-কে নির্ঝঞ্ঝাট ও সফল করার জন্য এই বছরের ১৯ জুলাই বারানসি নগরপালিকা (Varanasi Municipal Corporation)-র একটা অধ্যাদেশ নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
বারানসি নগরপালিকা-র ঘোষিত নির্দেশ অনুযায়ী, যে পথ দিয়ে কুনওয়ার যাত্রা চলবে সেই পথের পাশের যাবতীয় মাংস ও পোলট্রিজাত সামগ্রীর দোকান বন্ধ রাখতে হবে ও রাস্তার পাশের সকল দোকানের বোর্ডে দোকানের মালিকের নাম বড়ো করে লিখে রাখতে হবে।
যদিও বারানসি নগরপালিকা-র এই আদেশের বিরুদ্ধে গত ২৪ জুলাই জাতীয় লোকতান্ত্রিক দলের অধ্যক্ষ ডঃ সুহেল চৌধুরী [Dr. Suhel Chowdhury, President (Executive), National Loktantrik Party] এলাহাবাদ উচ্চ ন্যায়ালয়ে এক জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে জানিয়েছেন, "বারানসি পৌরনিগমের এই আদেশ একদিকে যেমন সংবিধান বিরোধী তেমনই সম্পূর্ণ অবৈধ। পৌরনিগমের এই আদেশ যেমন মুসলিম ধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ীদের রুটিরুজির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে তেমনই জনগণের স্বেচ্ছা ভোজনের উপরেও প্রভাব ফেলবে।"
যদিও বারানসি নগরপালিকা পক্ষ থেকে মহানাগরিক সন্দীপ শ্রীবাস্তব (Sandeep Srivastav, Mayor, Varanasi Municipal Corporation)- এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "দোকানের নাম ও মালিকের নাম দোকানের সামনে লিখে রাখার কথা ভারতের আইনেই লেখা আছে, কেউ যদি সেটা না মানতে চান তাহলে তিনিই অবৈধ কার্যকলাপকে উৎসাহিত করছেন।"
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সমস্ত ঝঞ্ঝাটের মূলে রয়েছে মুসলিম ধর্মের 'হালাল' রীতি।
কোরানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী 'হালাল' কথাটার আভিধানিক অর্থ হল খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান বা যেকোনো ভোগ্য তথা ভোজন সামগ্রী ব্যবহারের আগে শুদ্ধ করে নিতে হবে।
এক্ষেত্রে জানা দরকার কীভাবে কোনো বস্তুকে 'হালাল' করা হয়। কোনো বস্তুকে 'হালাল' করার আগে মৌলবীরা প্রথমে কলমা পড়ে নিজের মুখ তথা জিহ্বাকে শুদ্ধ করে নেন, তারপর মুখ থেকে পবিত্র থুতু ছিটিয়ে সামগ্রীকে শুদ্ধ করেন। তবে সব সময় হাতের কাছে যেমন মৌলভীদের পাওয়া যায় না তেমনই রোজ তাঁদের ব্যাবসাস্থলে ডাকাটাও ব্যায় সাপেক্ষ বিষয়। তাই মুসলিম ব্যবসায়ীরা নিজেরা বা তাঁদের কর্মচারীদের মাধ্যমে খাদ্যবস্তুর উপর থুতু ছিটিয়ে খাদ্যবস্তুকে পবিত্র করেন বলে অনেক মুসলিম ব্যবসায়ীরাই প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন।
এতদিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রশ্ন ছিল, "ভগবানের দর্শন ও পূজা করতে যাওয়ার পথে অপরের থুতু ছেটানো অপবিত্র উচ্ছিষ্ট খাদ্যবস্তু কেন পুণ্যলোভাতুর ভক্তদের ভক্ষণ করতে হবে ?"
কুনওয়ার যাওয়ার পথে হিন্দু পুণ্যার্থীরা যাতে অতি সহজে পথ পার্শ্বস্থ কোন দোকান মুসলিমদের সেটা বুঝতে পারেন বা অপবিত্র ও উচ্ছিষ্ট খাদ্যবস্তু ভক্ষণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারেন সেই জন্যই এই আদেশ জারি করা হয়েছে বলে মনে করছেন তথ্যাভিজ্ঞ মহল।
Comments
Post a Comment