সরকারীস্তরে উপেক্ষার শিকার প্রয়াত নাট্যাচার্য্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি


হীরক মুখোপাধ্যায়

কোলকাতা (৩০ জুন '২৪):- পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিমনস্ক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রাজ্যের মুখোজ্জ্বলখারী প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিদের স্মরণ-মননে সামান্যতম কার্পণ্য করতে চান না, ঠিক তখন মুখ্যমন্ত্রীর বিপ্রতীপে কোলকাতা পৌরনিগমের কর্মকাণ্ড দেখলে স্তম্ভিত হতে হয়।

কোলকাতা পৌরনিগমের বিধি ব্যাবস্থার কারণে প্রয়াত নাট্যাচার্য্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি (Late Natyacharyay Shishirkumar Bhaduri)-র জন্ম-মৃত্যুর তিথিতে 'কাশীপুর মহাশ্মশান'-এর অভ্যন্তরের 'শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সমাধি প্রাঙ্গণ'-এ অবস্থিত নাট্যাচার্য্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি-র স্মৃতিমন্দিরে মাল্যার্পণ বা শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে গেলেও কোলকাতা পৌরনিগমকে গুণেগার রূপে অর্থদণ্ড দিতে হয় শ্রদ্ধালু ব্যক্তি বা সংস্থারকে।


হায় রে দুর্ভাগা রাজ্য ! যে নাট্যাচার্য্য ১৯৫৯ সালে নিজের মৃত্যুর কয়েকমাস আগে ভারত সরকার প্রদত্ত 'পদ্মভূষণ'-এর মতো খেতাবকেও হেলায় প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, তাঁর জন্য কি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ বা কোলকাতা পৌরসভা একটুও ভিন্নধারার চিন্তা করতে পারে না ?
সরকার বা পৌরনিগম নিজেরা তো স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রয়াত নাট্যাচার্য্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি-র স্মরণে কাশীপুর মহাশ্মশানের অভ্যন্তরে কোনো অনুষ্ঠানই করে না, উল্টে যে বা যাঁরা স্মৃতিচারণ করতে আসেন তাঁদের থেকে অর্থ আদায় করতেও এরা দ্বিধা করে না।


আজ নাট্যাচার্য্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি-র ৬৬ তম প্রয়াণবার্ষিকীতে কাশীপুর মহাশ্মশানের অভ্যন্তরে অবস্থিত শিশিরকুমার ভাদুড়ী-র স্মৃতিমন্দিরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে সঞ্চারী-র অধ্যক্ষ দেবকুমার পাঠক (Devkumar Pathak, President, Sanchari) ক্ষোভের সাথে জানান, "প্রয়াত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জীর বদান্যতায় ১৯৭৬ সালে এই স্মৃতিমন্দিরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করার অধিকার পাওয়া গেলেও কোলকাতা পৌরনিগম আমাদের থেকে প্রতিবছর কর রূপে নির্দিষ্ট অর্থ সংগ্রহ করে চলেছে।"

সংস্থার অধ্যক্ষ যখন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কোলকাতা পৌরনিগম তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সমালোচনা করেছেন তখন সঞ্চারী-র সম্পাদক তথা চলচ্চিত্র পরিচালক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব নারায়ণ রায় (Narayan Roy, Secretary,  Sanchari) জানিয়েছেন, "আশা করি আগামী দিনে এই সমস্যা দূরীভূত হবে।"

বলে রাখা ভালো, গত ৪৭ বছর ধরে নাট্যাচার্য্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি-র জন্ম এবং মৃত্যু তিথিতে 'কাশীপুর মহাশ্মশান'-এ এসে নাট্যাচার্য্যর সমাধিমন্দির ও প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে আসছে 'সঞ্চারী'।

চারশো বছরের পুরনো এই মহাশ্মশানে নাট্যাচার্য্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি-র পাশাপাশি রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, স্বামী অভেদানন্দ, 'রামকৃষ্ণ কথামৃত'-র রচনাকার মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত ওরফে শ্রীম, রামকৃষ্ণের মন্ত্রশিষ্যা গৌরীমাতা, সারদাদেবীর মন্ত্রশিষ্যা দুর্গামাতা, স্বামী কৃষ্ণানন্দ সহ বিপ্লবী খগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়-এরও স্মৃতিমন্দির বানিয়ে দিয়েছে কোলকাতা পৌরনিগম।

আজ প্রয়াত নাট্যাচার্য্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি-র ৬৬ তম প্রয়াণবার্ষিকীতে প্রয়াত নাট্যাচার্য্য-র প্রপৌত্রী সুচন্দ্রা ভাদুড়ী, বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম খলনায়ক তথা নাট্যব্যক্তিত্ব মৃত্যুন হাজরা এবং অপর নাট্যব্যক্তিত্ব তিনু ভট্টাচার্য-র উপস্থিতিতে স্থানীয় পৌরপ্রতিনিধি অমর পাল (Amar Paul, Councillor, Word No. 1, Kolkata Municipal Corporation) সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, "কোলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে যথেষ্ট রকম ওয়াকিবহাল আছে 'কোলকাতা পৌরনিগম'।" 
                                                 ছবি : রণেশ বিশ্বাস 

Comments