এম রাজশেখর
নয়াদিল্লি (৪ মার্চ '২৪):- "কেন্দ্রীয় সরকার সমবায় আন্দোলনকে জনগণের আন্দোলনে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছে," বলে স্পষ্টভাবে জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সহযোগিতা মন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah, MIC, Department of Home & Co-operation, Government of India)।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল নতুন দিল্লিতে 'এন ইউ সি এফ ডি সি এল' (NUCFDCL)-এর উদ্বোধন করে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে একথা জানান। বলে রাখা ভালো, শহরের সমবায় ব্যাঙ্কগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টা করছিল ভারত সরকার।
প্রশাসনের বক্তব্য অনুযায়ী, 'জাতীয় নগর সমবায় অর্থ ও উন্নয়ন কর্পোরেশন লিমিটেড' (National Urban Co-operative Finance & Development Corporation Limited) সংক্ষেপে 'এন ইউ সি এফ ডি সি এল' শহরের সমবায় ব্যাঙ্কগুলোর উন্নতিকল্পে কাজ করবে।
উদ্বোধনী ভাষণে অমিত শাহ বলেছেন, "নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি করতে হবে সমবায়গুলোকে। সমবায় সংস্থাগুলো নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক অগ্রগতিতে জোর না দিলে দেশ এগিয়ে যেতে পারব না।"
শাহ বলেছেন, 'প্রায় কুড়ি বছরের সংগ্রামের পরে, 'এন ইউ সি এফ ডি সি এল' প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হল। এটি দেশ ও সরকারের কাছে অত্যন্ত শুভ দিন।
এর আগে সমবায় মন্ত্রক এবং সমবায় খাত অনেক মন্ত্রকের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে, একটা পৃথক সহযোগিতা মন্ত্রক প্রতিষ্ঠা করেছেন, সমবায় খাতে নতুন প্রাণের শ্বাস দিয়েছেন। সমবায় মন্ত্রণালয়ের আকারে সমবায়গুলোকে একটা নিজস্ব ঠিকানা দেওয়া হল। এখন থেকে এই ঠিকানাই সমবায়গুলোর মাথার ছাতা হয়ে কাজ করবে।
বিগত ১২৫ বছর ধরে, সমবায় ক্ষেত্র সংগ্রাম করেছে এবং তার অস্তিত্ব রক্ষা করেছে, কিন্তু এখন, সরকারী ব্যবস্থার সমর্থনে, এটা দ্রুত অগ্রগতি করবে এবং দেশের অর্থনীতিতে সম্মান অর্জন করবে।
বর্তমানে সমবায় আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে। ভারতের মতো একটা বিশাল দেশে উন্নয়নের মাপদণ্ডটা কেবল সংখ্যা হতে পারে না, দেশের উন্নয়নে কতজন লোক অংশগ্রহণ করে সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ মাপদণ্ডের মাধ্যমে এটি বিচার করা উচিত।
ছাতা স্বরূপ এই সংগঠনটা সময়ের প্রয়োজন ছিল।"
অমিত শাহ আরো বলেছেন, "এই সংস্থা গঠনের পর দেশে আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংকগুলোর উন্নয়ন বহুগুণ বেড়ে যাবে। সমবায় ব্যাঙ্কগুলোকে সবসময় যেমন নিজেদের মান বাড়াতে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে তেমনই প্রশাসনিক চাহিদা মেনে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সমস্ত নিয়ম মেনে চলতে হবে। সমবায় ব্যাঙ্কগুলো যদি তা করতে ব্যর্থ হয় তবে তারা ভবিষ্যতে প্রতিযোগিতায় টিকি থাকতে পারবে না।"
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সহযোগিতা মন্ত্রী আরো বলেছেন "সমবায় অর্থায়নে ভাল কাজ করে চলা ক্রেডিট সোসাইটিগুলোকে ব্যাঙ্কে রূপান্তর করার জন্য ছাতা সংস্থার একটি ব্যবস্থা স্থাপন করা উচিত।
'এন ইউ সি এফ ডি সি এল'-এর অন্যতম উদ্দেশ্য হতে হবে ক্রেডিট সোসাইটি এবং নগর সমবায় ব্যাঙ্কগুলির পরিষেবা এবং সংখ্যা সম্প্রসারণ করা। প্রতিটা শহরে কীভাবে একটা আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করা যায় সে বিষয়ে একটি সময়-নির্ধারিত কর্মসূচি তৈরি করা দরকার। সমবায় আন্দোলনকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এটাকে প্রাসঙ্গিক ও প্রসারিত করতে হবে। ছাতা সংস্থাটা ছোট ব্যাঙ্কগুলোকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করবে, ব্যাঙ্ক এবং নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে আলোচনার সুবিধা দেবে এবং যোগাযোগের উন্নতিতে কাজ করবে। এই সংস্থাটাকে আমাদের সীমানা প্রশস্ত এবং অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করতে হবে। সমবায় আন্দোলনকে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দেশ বা সরকারের অঙ্গুলিহেলনে নগর সমবায় ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব বর্তাবে এই ছাতা স্বরূপ সংগঠনের উপর।"
অমিত শাহ বলেছেন, "সারা দেশে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য শহুরে সমবায় ব্যাঙ্কগুলোর একটা ক্লিয়ারিং সিস্টেম স্থাপন করা অপরিহার্য। দেশে বর্তমানে ১,৫০০ টা ব্যাঙ্কের ১১,০০০ টা শাখার সম্মিলিত শক্তি রয়েছে, যার মধ্যে ৫ লক্ষ কোটি টাকা আমানত এবং মোট ৩.৫০ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। এটা একটি উল্লেখযোগ্য শক্তি, এবং লক্ষ্যটা কেবল এটিকে উন্নত করাই নয়, সমগ্র নগর সমবায় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য সম্মিলিতভাবে ব্যবহার করা উচিত। দেশের আরবান কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলো তাদের নেট এনপিএ হার ২.১০ শতাংশ কমিয়েছে এবং আরও উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। ছাতা সংস্থাটির ভিত্তি স্থাপনের জন্য আগামী তিন বছরে কঠোর পরিশ্রম করা উচিত।"
Comments
Post a Comment