হীরক মুখোপাধ্যায়
কোলকাতা (১৯ অক্টোবর '২৩):- সৃষ্টির উল্লাসে পশ্চিমবঙ্গের বুকে প্রথম ক্লে পলিমার (Clay Polymer) দিয়ে দুর্গামূর্তি (Idol of Goddess Durga) তৈরি করলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বীকৃতি প্রাপ্ত মহিলা শিল্পী আভা ব্যানার্জি (Aava Banerjee, Artisan)।আভা ব্যানার্জি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, "১৯৮৪ সালে হল্যান্ড গিয়ে শিখে এসেছিলাম পলিমার দিয়ে ভাস্কর্য তৈরির বিশেষ বিদ্যা। সেই বিদ্যার বলেই তৈরি করেছি এই মাতৃমূর্তি।"
আমেরিকা থেকে 'ক্লে পলিমার' আনিয়ে তৈরি হয়েছে এই মূর্তি।
বলে রাখা ভালো, আমারিকা থেকে ২২৭ গ্রাম ক্লে পলিমার আনতে ভারতীয় মুদ্রায় খরচ হয় ১৩০০ টাকা। ২২৭ গ্রামের একটা ক্লে পলিমার প্যাকেট থেকে তৈরি করা যেতে পারে ছোটো মাপের একটা মূর্তির মুখ এবং মাত্র দুটো হাত। সুতরাং সহজেই অনুমেয় এই মূর্তি তৈরি করতে বিদেশ থেকে কতটা ক্লে পলিমার আনতে হয়েছে।
শিল্পী আভা ব্যানার্জি তাঁর নিজস্ব ভাবনা (Theme) অনুসারে মূর্তি নির্মাণ করেছেন। মূর্তির দিকে তাকালে মনে হবে মা যেন তাঁর চার সন্তান ও অসুরকে নিয়ে 'ঘরোয়া বৈঠক' (In-house Meeting)-এ ব্যস্ত।
এই মূর্তির আরো বিশেষত্ব হল, এখানে দুর্গামূর্তির সাবেক গড়ন রূপে মার পায়ের তলায় ত্রিশূলবিদ্ধ অসুর বা মার ডান দিকে গণেশ, লক্ষ্মী বা বাম দিকে সরস্বতী, কার্তিককে সেভাবে দেখা যাবে না।
মা'র দিকে তাকালে মনে হবে মা যেন সন্তানাদি নিয়ে বাপের বাড়ির একটা চৌকির উপর বসে আপনজনদের সাথে আলাপচারিতায় বিভোর।
শিল্পী জানিয়েছেন, "প্রথমে যথেষ্ট ভয় হচ্ছিল যে মাতৃরূপ কল্পনায় এরকম অদলবদল করলে সেটা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিক হবে কিনা কিংবা সমাজ এটা কীভাবে নেবে !
কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম, মূল রামায়ণকেই যদি চল্লিশভাবে লেখা যেতে পারে এবং সেগুলো যদি সমাজে গ্রহণীয় হতে পারে তাহলে নতুন ভাবনা নিয়ে এখনই অত দুর্ভাবনা না করলেও হয়তো চলবে।"
আভা ব্যানার্জি তাঁর এক শিক্ষার্থী শর্মিষ্ঠা পাল-কে নিয়ে গত ১০ মাস ধরে নীরবে নিভৃতে ৩৫ হাজার টাকার কাঁচামাল কিনে এই মূর্তি তৈরি করেছেন।
কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম, মূল রামায়ণকেই যদি চল্লিশভাবে লেখা যেতে পারে এবং সেগুলো যদি সমাজে গ্রহণীয় হতে পারে তাহলে নতুন ভাবনা নিয়ে এখনই অত দুর্ভাবনা না করলেও হয়তো চলবে।"
আভা ব্যানার্জি তাঁর এক শিক্ষার্থী শর্মিষ্ঠা পাল-কে নিয়ে গত ১০ মাস ধরে নীরবে নিভৃতে ৩৫ হাজার টাকার কাঁচামাল কিনে এই মূর্তি তৈরি করেছেন।
মূর্তির নির্মাণ কৌশলের উপর আলোকপাত করতে গিয়ে শিল্পী আভা ব্যানার্জি জানিয়েছেন, "ইটালি থেকে আনা ক্লে পলিমার ব্লেণ্ডার মেশিনের সহযোগিতায় ক্লে পলিমার সিটকে ব্লেণ্ড করে রান্নাঘরে ব্যবহার্য কিচেন ফয়েলকে আধার বানিয়ে তার উপর ব্লেণ্ডেড ক্লে পলিমার দিয়ে মুখ, হাত, পা বা গলা বানিয়ে তাকে অভেন বেকড করে তার উপর একপ্রস্থ ওয়াল পুট্টীর আস্তরণ দিয়ে তৈরি হয়েছে মূর্তির অঙ্গ।"
শিল্পীর তৈরি করা এই মূর্তি এবার পূজিত হবে ৫৩, টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের এক বনেদী ব্রাহ্মণ বাড়িতে।
Comments
Post a Comment