বধূ নির্যাতন সহ একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন বিজেপির কালচারাল সেলের কার্যনির্বাহী সদস্য শুভ্র মজুমদার
হীরক মুখোপাধ্যায়
কোলকাতা (৩ মে '২৩):- বধূ নির্যাতন, আপন স্ত্রীর গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট সহ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রীকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকির মতো একাধিক অপরাধে অভিযুক্ত হলেন 'ভারতীয় জনতা পার্টি-র পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ শাখার সাংস্কৃতিক প্রকোষ্ঠ'-র কার্যনির্বাহী সদস্য শুভ্র মজুমদার (Subhro Majumder, Executive Member, BJP WB State Cultural Cell)। গত ২৫ এপ্রিল বারাসাত-এর আরক্ষাধক্ষক, মহকুমা আরক্ষা আধিকারিক সহ বারাসাত থানায় শুভ্র মজুমদার-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র জমা দেন তাঁর স্ত্রী অদিতি মজুমদার (মল্লিক)।
শুভ্র মজুমদারের নামে বারাসাত থানায় মামলা নথিভুক্তির সাথে সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কমবেশি চর্চা শুরু হয়েছে।
বিজেপি বিরোধী সবকটা রাজনৈতিক দলকেই একসঙ্গে সুর তুলে বলতে শোনা গেছে, "সাম্প্রতিক অতীতে বিজেপি নেতা সৌমিত্র খাঁ-কে নিয়ে জলঘোলা হলেও কখনো শোনা যায় নি তিনি তাঁর স্ত্রীকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন।"
থানায় জমা পড়া শুভ্রর স্ত্রী-র অভিযোগ পত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ২০০৮ সালে শুভ্র মজুমদার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন অদিতি মল্লিকের সাথে। বিবাহের পর তিনি তাঁর পিতা সুভাষ মজুমদারের সরকারী আবাসে নবপরিণীতা স্ত্রীকে নিয়ে গেলেও পরবর্তী সময়ে ঘর জামাই রূপে শ্বশুরবাড়িতে থাকতে শুরু করেন শুভ্রবাবু।
শ্বশুরবাড়িতে ঘর জামাই হিসাবে থাকলেও স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে অত্যাচার করতে শুভ্র মজুমদার কখনো নাকি কার্পণ্য করেননি।
ঘর জামাই থাকাকালীন বিভিন্ন সময় তিনি কখনো শালীর বিয়ে ভেঙে দেবার ভয় দেখিয়ে নয়তো অন্যান্য অছিলায় তাঁর স্ত্রীর বাপের বাড়ি থেকে প্রাপ্ত গহনা কেড়ে নিয়ে বিক্রি করে টাকাও নষ্ট করে ফেলেছেন।
অভিযোগ পত্রের বয়ান থেকে আরো জানা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ঘর জামাই থাকার পর গত বছর মে মাসের ৯ তারিখ শুভ্র মজুমদার তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে চাঁপাডলি মোড় সংলগ্ন বিবেকানন্দ রোডের এক ভাড়া বাড়িতে থাকতে আসেন। ভাড়া বাড়িতে আসার পর তিনি তাঁর স্ত্রীর উপর অত্যাচারের বহর আরো বাড়িয়ে দেন। প্রায় রাতে মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তির দাবীতে স্ত্রীকে চাপ দেওয়া, খেতে না দেওয়া, স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েও কোনো কাজ না হওয়ায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর তাঁর স্ত্রীকে ঘাড় ধরে এক কাপড়ে ঘর থেকে বার করে দেওয়া হয়।
শুভ্র মজুমদার সত্যি কী এতটা জঘন্য প্রকৃতির, শুভ্র মজুমদার সত্যি কী পরনারীতে আসক্ত নাকি শুভ্র মজুমদারের রাজনৈতিক প্রগতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁকে সমূলে উৎখাত করার জন্য এটা শাসকদলের কোনো চাল এই দ্বিধাদ্বন্দ্বে যখন বারাসাতের একশ্রেণীর রাজনীতিকরা দ্বিধান্বিত, ঠিক সেই মহেন্দ্রক্ষণে বারাসত জেলা প্রশাসনিক ভবণের অন্দরমহল থেকে যে কথা ভেসে এসেছে সে কথাও কম রোমহর্ষক নয়।
জেলা প্রশাসনিক ভবণের অন্দরমহল থেকে জানা গেছে, "গত বছর শুভ্র মজুমদারের আহ্বানে তাঁর দাম্পত্য কলহ নিরসনের উদ্দেশ্যে এক আধিকারিক ব্যক্তিগত পর্যায়ে শুভ্র মজুমদারের শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আধিকারিক শুভ্র মজুমদারের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বুঝতে পারেন ওঁনাকে শুভ্রবাবু যা বুঝিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তা তো ঠিক ছিলই না বরং একশো শতাংশ ভুল ছিল। শুভ্রর শ্বশুরবাড়িতে বসে শুভ্রর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন সহ একাধিক কেচ্ছাকাহিনীর জীবন্ত দলিল চোখের সামনে দেখতে পেয়ে সেই আধিকারিক নিজের ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে শুভ্র-র গালে সপাটে একটা চড় মেরে শুভ্রর শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।"
সত্যি কী শুভ্র মজুমদার স্ত্রী নির্যাতন, স্ত্রীর গহনা কেড়ে নিয়ে বিক্রি করার মতো একাধিক অপরাধে অপরাধী, সত্যি কী তাঁকে এই সব অপরাধের জন্য কোনো সরকারী আধিকারিক সপাটে চড় মেরেছিলেন এইসব বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানার জন্য বেশ কিছু সাংবাদিক তাঁর বর্তমান বাসভবণে গেলেও তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়া যায় নি।
Comments
Post a Comment