গরম পড়তেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হু হু করে নামতে শুরু করেছে ভৌম জলস্তর


হীরক মুখোপাধ্যায় 

কোলকাতা (২৯ এপ্রিল '২৩):- বলা হয়ে থাকে বৈশাখ এবং জ্যৈষ্ঠ মাস গ্রীষ্মকাল। পঞ্জিকা অনুসারে ঋতু শুরু হওয়ার পর সবেমাত্র পক্ষকাল (১৫ দিন) অতিবাহিত হয়েছে, অথচ এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে হু হু করে ভৌম জলস্তর (Water level) নামার খবর আসতে শুরু করেছে।

না বিষয়টা একেবারেই নতুন কিছু নয়, নতুন বিষয় হলো; সাম্প্রতিক অতীতে গরম কাল শুরু হওয়ার পর এত তাড়াতাড়ি কোনোবারেই পেয় জলের এহেন তীব্র সঙ্কট (Crisis of Drinking Water) শুরু হয় নি।

ঘটনার অভিঘাতে এরই মধ্যে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী বা অপর গোষ্ঠীর সাথে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদেল বেশ কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে গেছে।
সাম্প্রতিক অতীতের কথা চিন্তা করলে সম্ভবতঃ এই বছরেই পানীয় জলের দাবীতে পথ আটকিয়ে জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গিয়ে আরক্ষাবাহিনী ও তাদের সহায়ক গোষ্ঠীর কাছে নির্বিচারে মারধর ও দৈহিক নির্যাতনে স্বীকার হয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আবালবৃদ্ধবনিতা।

এটা প্রথমেই বলে রাখা দরকার, এটা নিছকই এক প্রাকৃতিক বিষয়, এর সাথে রাজ্য প্রশাসনের সেভাবে কোনো সরাসরি যোগাযোগ নেই।
কিন্তু বিষয়টা হলো, সবকিছু জেনে বুঝেও জেলা বা রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় আমলাদের বছরের পর বছর হাত গুটিয়ে বসে থাকাটা মোটেও কাম্য নয়।

শুধু ভারত সরকার নয় এর আগে বারংবার জনসচেতনতার স্বার্থে ঢাকঢোল পিটিয়ে মুক্ত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠান করে বা গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন খাতের সরকারী অর্থের শ্রাদ্ধ করা হলেও এর উপযোগিতা আজও সেভাবে কারোরই নজরে আসছে না।

রাজ্য প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনগুলোর চোখে আঙুল দিয়ে এখন প্রশ্ন করা যেতেই পারে, 'বৃষ্টির জল ধরে কাজে লাগানো' (Rainwater Harvesting Programme)-র পরিকল্পনাটা কেনো বাস্তবায়িত হলো না ?
একশো দিনের কাজে সমগ্র রাজ্যে বেশ কিছু জলাশয় তৈরী হলেও এভাবে জলসঙ্কট দেখা দিচ্ছে কীভাবে, ব্যর্থতাটা কোথায় লুকিয়ে আছে, সেটা খোঁজা বা সেভাবে বোঝার কী কোনোদিন কোনো চেষ্টা হয়েছে ?

কেনো রাজ্য বা জেলার বুকে অতি উচ্চ শিক্ষিত ও অনুভবী আধিকারিক থাকা সত্ত্বেও জল সম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন বিভাগকে কাজে না নামিয়ে খালি বর্ষাকালীন বন্যার সময় নাম কা ওয়াস্তে লঞ্চে করে সুন্দরবনের জল জঙ্গল ঘোরাতে পাঠানো হলেই কী সমস্যার নিরাময় সম্ভব !

ব্যক্তিগত ভাবে আমি যতই বিষোদগার করিনা কেন, মনে মনে একথা পুরোপুরি বিশ্বাস করি যে দপ্তরের আধিকারিক ও কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় ও রাজ্য প্রশাসন থেকে ঠিকঠাক সময়ে অর্থ প্রেরণ করা হলে রাজ্যের কোনো উন্নয়ন কাজ পুরোপুরি স্তব্ধ হওয়ার কথা নয়।

সম্প্রতি এই বিষয় নিয়েই রাজ্য ও জেলা স্তরের বেশ কিছু আধিকারিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে যে সব তথ্য উজাগর হয়েছে সেটাও হেলাফেলার বিষয় নয়।
আধিকারিকদের সাফ কথা, গ্রাম পঞ্চায়েত বা পৌরাঞ্চল থেকে সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা উঠে না এলে দফতরের সেভাবে কিছুই করণীয় নেই।

সরকারী আধিকারিক ও কর্মীদের এই হাল ছেড়ে দেওয়া মনোভাব যেমন কখনোই কাম্য নয়, ঠিক সেভাবে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়ে কখনোই হাত গুটিয়ে থাকতে পারেন না আমাদের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সদস্য ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিগণ।
তাই নিজেদের ভবিষ্যত স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টা মাথায় রেখে ভুক্তভোগী নাগরিকদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ রেখে ও চাপ বাড়িয়ে উন্নয়নটা দেখে বুঝে নেওয়া সবারই একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।

Comments