বনফুল রচিত জাগ্রত দেবতা রূপালী পর্দায় দেখা যাবে জাগ্রতা রূপে


এম রাজশেখর 

কোলকাতা (১৭ এপ্রিল '২৩):- চলচ্চিত্র পরিচালনার নামে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কালজয়ী লেখক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ওরফে বনফুল (Balai Chand Mukhopadhyay @ Bonophool) রচিত ছোটোগল্প 'জাগ্রত দেবতা' (Jagroto Devta)-র সপিণ্ডকরণ করে ছাড়লেন স্বল্প দৈর্ঘ্যের বাংলা চলচ্চিত্র 'জাগ্রতা' (Jagrota, Bengali Shortfilm)-র পরিচালক জয়দীপ রাউত (Joydeep Routh, Film Director, Jagrota)।

সৃজনশীলতার প্রদর্শন ঘটাতে গিয়ে আক্ষরিক অর্থেই মূল গল্প 'জাগ্রত দেবতা'-র মুড়ি ঘণ্ট বানিয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক।
তারই ফল স্বরূপ খ্যাতির হাজার হাত দূর দিয়ে উল্কাবেগে এগিয়ে গিয়ে অখ্যাতির সাগরে পতিত হতে চলেছে 'জাগ্রতা' নামাঙ্কিত স্বল্প দৈর্ঘ্যের এই চলচ্চিত্র।


চলচ্চিত্র নির্মাণের নামে বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের কী সর্বনাশ করেছেন সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞানহীন চলচ্চিত্র পরিচালক সাংবাদিকদের হাসি হাসি মুখে জানিয়েছেন, "মূল গল্পে দুটো চরিত্র ছিল আমি এখানে ১৮ টা চরিত্র বানিয়েছি।"
কিন্তু সত্য হল, বনফুল বিরচিত ছোটোগল্প 'জাগ্রত দেবতা'-য় যাদব, হরেন এর সাথে রয়েছে প্রবীণ নীলমণি নামের আরেক বিশেষ চরিত্র।
না এখানেই শেষ নয়, চলচ্চিত্র পরিচালক মূল লেখকের সৃষ্টির উপর খোদকারি করতে গিয়ে গল্পের উহ্য স্বত্বার সম্পূর্ণ লিঙ্গান্তর পর্যন্ত ঘটিয়ে বসে আছেন।
সংবাদমাধ্যমের সামনে বিবৃতি দিতে গিয়ে জয়দীপ রাউত জানিয়েছেন, "বনফুলের লেখা 'জাগ্রত দেবতা' নামাঙ্কিত মূল কাহিনীতে শিব ঠাকুরের মহিমাকে ঘিরেই গল্প আবর্তিত হয়েছিল আমি এখানে শিবের বদলে কালী-কে ঘিরে দৃশ্যরচনা করেছি।"


'জাগ্রত দেবতা' গল্পের তৃতীয় অনুচ্ছেদে পরিস্কার ভাবে লেখা আছে, '....ধনী মুকুজ্যেরা দায়ী করলেন পুরোহিতকে - ওই ব্যাটাই গোলমাল করিয়াছে। পুরোহিত চৌধুরীদের কৃপাভিক্ষা করিয়া আত্মরক্ষা করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন।..'


আবার শেষ অনুচ্ছেদ বা চতুর্থ অনুচ্ছেদে লেখা আছে, '.....দমিলেন না কেবল দৃঢ়বিশ্বাসী নীলমণি। .... নীলমণি কেবল রাস্তায় ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন। রক্ত চক্ষু, স্ফীত নাসা ! ঘরে ঘরে খোঁজ করিতেছেন, পাগলটা কোথায় গেল ? তাহাকে খুঁজিয়া বাহির করিতেই হইবে।'

অথচ স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র 'জাগ্রতা'-য় প্রবীণ নীলমণিকে ছাড় দিয়ে মায়ের পূজারী তথা পুরোহিতকেই পাগল বানিয়ে ছেড়েছেন 'জাগ্রতা'-র পরিচালক জয়দীপ রাউত। বলে রাখা ভালো, 'জাগ্রতা' নামাঙ্কিত স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রে পুরোহিতের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন টলিউড ফিল্ম ইণ্ডাস্ট্রীর অন্যতম অভিনেতা রজতাভ দত্ত (Rajatava Dutta, Actor)।

'জাগ্রতা' নামাঙ্কিত স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রে সত্যি যদি কোনো বিশেষ মুহুর্ত অভিনয়ের গুণে জনগণের মনে দাগ কাটতে সমর্থ হয় তবে তা হবে চলচ্চিত্র পরিচালক জয়দীপ রাউতের কন্যা গুঞ্জা-র সামান্য একঝলক অভিনয়।

'কবিতার কক্ষপথ সাহিত্য পত্রিকা' এবং তাপস রায়-এর যৌথ প্রযোজনা (Produced by : Kobitar Kokshapath & Tapash Roy)-য় এবং জয়দীপ রাউতের নির্দেশনায় নির্মিত হয়েছে আধঘণ্টার স্বল্পমেয়াদি চলচ্চিত্র 'জাগ্রতা'।
জাগ্রতায় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রজতাভ দত্ত, অনুজয় চ্যাটার্জি, নিশাদ ফারহান সহ অন্যান্য ব্যক্তিরা।

'জাগ্রতা'-র প্রিমিয়ার উপলক্ষ্যে গতকাল সন্ধ্যায় রাজারহাট নিউটাউন এলাকার এক বিশেষ স্থানে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা রজতাভ দত্ত, নবাগতা নিশাদ ফারহান, অনুজয় চট্টোপাধ্যায়, 'কবিতার কক্ষপথ সাহিত্য পত্রিকা'-র সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী, সম্পাদিকা শ্রীমতী সুপর্ণা চক্রবর্তী, সভাপতি শ্রীমতী মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী, সহ সভাপতি পঙ্কজ দত্ত, সহ সম্পাদক বিমান বিশ্বাস, তাপস রায় এবং কবিতার কক্ষপথ সাহিত্য পত্রিকার পরিচালক মন্ডলী এবং অনেক সাহিত্য ও সিনেমা প্রেমী গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের পরিচালক জয়দীপ রাউত মনে করেন," 'জাগ্রতা'-র প্রযোজকরা সম্পূর্ণ স্বাধীন ও স্বতন্ত্র কাজের যে সুযোগ, সংস্কৃতি ও বাতাবরণ তৈরী করেছেন তা সত্যিই বিরল এবং এটা যে কোন স্রষ্টার সবচেয়ে বড় কাম্য শর্ত। এই ভাবে এগোলে নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতে আরো অনেক ভাল কাজ করতে পারবে প্রয়োজনা সংস্থা।" 

(মূল কাহিনী সম্পর্কিত তথ্য ঋণ : এস পি কাকলি)

Comments