ক্ষতহীন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাঁকুড়ার এক শিশুর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিল অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস কোলকাতা

এম রাজশেখর 

কোলকাতা (২৩ ডিসেম্বর '২২):- বাইরে থেকে ক্ষতহীন এক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাঁকুড়া-র জনৈক শিশুর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিল অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস কোলকাতা (Apollo Multispeciality Hospitals Kolkata)।

হাসপাতাল সূত্রে জানান হয়েছে,
"প্রবল সাইনাসাইটিসের রোগী, অতি অগ্রসর রাইট সাইডেড অরবাইটাল সেলুলাইটিস (severe sinusitis with right sided orbital cellulitis)-এ ভোগা ৬ বছরের রুদ্রাঞ্জন সিনহাবাবু (Rudranjan Sinhababu)-কে নতুন দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিল 'অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস কলকাতা', এই রোগ সারা পৃথিবীতে ১ শতাংশেরও কম শিশুর হয়ে থাকে।"

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, "বাঁকুড়ার জিরাবাদের বাসিন্দা এই শিশুর ডিসেম্বর ২০২২-এর প্রথম সপ্তাহ থেকে জ্বর ছিল, সঙ্গে ছিল সর্দিকাশি। ওষুধ খেয়ে জ্বর কমে গেলেও চোখ ক্রমশ ফুলছিল, সঙ্গে ছিল ব্যথা, লাল হয়ে যাওয়া এবং চোখ নাড়ানোর অসুবিধা।
স্থানীয় ডাক্তার IV অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে তার চিকিৎসা করেছিলেন কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, কলকাতায় রেফার করেন। রুদ্রাঞ্জনকে ১০ ডিসেম্বর 'অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস' কলকাতার সিনিয়র ইএনটি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জেন ডাঃ শান্তনু পাঁজা (Dr. Shantanu Panja, [Sr.ENT Head & Neck Surgeon]) কাছে নিয়ে আসা হয়।
সিটি স্ক্যানে দেখা যায় যে শিশুর প্রবল সাইনাসাইটিস উইথ রাইট সাইডেড অরবাইটাল সেলুলাইটিস হয়েছে।

গুরুতর পরিস্থিতিতে ডিসেম্বর ১২, ২০২২ তারিখে ডাঃ পাঁজা ও তাঁর দল শিশুটির উপর জরুরি অস্ত্রোপচার করেন।
তাঁরা এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি উইথ অরবাইটাল ডিকম্প্রেশন করেন এবং আই সকেট ও সাইনাসে জমে থাকা সংক্রমিত জিনিসগুলো বার করে দেন। গোটা অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে বাইরের দিকে কোনো কাটাকাটি ছাড়াই। এ এক ক্ষতহীন প্রোসিডিওর যা এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে করা হয়েছে। প্রথমে এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে সাইনাসগুলোতে ঢোকা হয়েছে এবং সংক্রমিত জিনিসগুলো পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। তারপর চোখের মণি আর সাইনাস ছিদ্রের মধ্যেকার দেয়াল সরিয়ে দেওয়া হয় এবং অরবিটের যে আবরণকে পেরিঅরবাইটা বলা হয় তাকে সামনে আনা হয়। এরপর পেরিঅরবাইটা কাটা হয় এবং চোখের মণির উপাদানগুলো ঘেঁটে দেখা হয়। চোখের মণির ভিতরের পুঁজ ও অন্যান্য নিঃসৃত জিনিস বার করে দেওয়া হয়, ফলে অপটিক ক্যানাল সমেত সম্পূর্ণ অরবিট ডিকম্প্রেসড হয়ে যায়।
চোখের চাপ থেকে স্বস্তি মেলায় এবং পুঁজ বেরিয়ে যাওয়ায় শিশুটির ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নাটকীয় উন্নতি হয়। ফোলার সমস্যা কেটে যায়, দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয় এবং রং দেখার ক্ষমতা সম্পূর্ণ ফিরে আসে।
হাসপাতালে থাকার পুরো সময়টা শিশুটির মেডিকাল ব্যবস্থাপনা চলেছে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কৌশিক মৌলিক (Dr. Kaushik Maulik, MD [Ped]) ও তাঁর দলের তত্ত্বাবধানে। তিনি অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, কলকাতার কনসালট্যান্ট পেডিয়াট্রিক্স।
দুর্গাপুরের বাসিন্দা রুদ্রাঞ্জনের বাবা-মা নিশ্চিন্ত এবং খুশি যে যথাসময়ে হস্তক্ষেপ এবং সতর্ক যত্নের ফলে তাঁদের ৬ বছরের ছেলের দৃষ্টিশক্তি বাঁচানো গেছে।"

প্রবল সাইনাসাইটিস থাকা শিশুদের মধ্যে অরবাইটাল অ্যাবসেসের ঘটনা ১ শতাংশেরও কম। এ এক বিরল এবং গুরুতর অবস্থা। অভিজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের হাতে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করলে তবেই এক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি বাঁচানো যায়।
দীর্ঘস্থায়ী সাইনাসাইটিস হতে পারে কোনো সংক্রমণ থেকে, সাইনাসে (নাকের পলিপে) কোনো বৃদ্ধি বা সাইনাসের লাইনিং ফুলে গেলে। এর লক্ষণ হিসাবে নাক আটকে যেতে পারে যাতে নাক দিয়ে নিশ্বাস নিতে অসুবিধা হয় এবং চোখের আশপাশ, গাল, নাক বা কপাল ফুলে যেতে পারে। সাইনাসাইটিস সাধারণত ঠান্ডা লাগা বা ফ্লু ভাইরাস আপার এয়ারওয়ে থেকে সাইনাসগুলোতে ছড়িয়ে যাওয়ার ফল।"

আজ কোলকাতা প্রেস ক্লাবে এই সংক্রান্ত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ডাঃ কৌশিক মৌলিক, কনসালট্যান্ট পেডিয়াট্রিক্স, অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, কলকাতা, বলেন “সাইনাস থেকে ইনফেকশন চোখে ছড়িয়ে গিয়েছিল আর আই সকেটে পুঁজ জমে গিয়েছিল। বাচ্চাটা খুবই অসুস্থ ছিল। চোখের মণির নড়াচড়া কমে গিয়েছিল এবং দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ কমে যাচ্ছিল। এটা সাইনাস ইনফেকশনের সবচেয়ে ভয়ংকর জটিলতাগুলোর একটা। এখানে সময় মত চিকিৎসা না হলে বাচ্চার দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ চলে যাওয়ার সমস্ত সম্ভাবনা থাকে।”

ডাঃ শান্তনু পাঁজা, অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, সিনিয়র ইএনটি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জেন, অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, কলকাতা, বললেন “এই অপারেশনটা চ্যালেঞ্জিং ছিল কারণ বাচ্চার বয়স মাত্র ৬ বছর। এই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে খুব সীমিত জায়গা নিয়ে চরম সূক্ষ্মভাবে, যাতে চোখের মণি আর অপটিক নার্ভের কোনো ক্ষতি না হয়। এমনকি আমরা কানের মাইক্রোসার্জারিতে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় এই অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন স্তরে সেগুলো ব্যবহার করেছি, কারণ ওগুলো আকারে বেশি ছোট এবং খুব ছোট জায়গায় সূক্ষ্মভাবে ব্যবহার করা যায়।”

Comments