ক্ষতবিক্ষত হৃদয় ও অসম্মানের বোঝা মাথায় নিয়ে কোলকাতার ইঞ্জিনিয়াররা পালন করলেন ইঞ্জিনিয়ার্স ডে


হীরক মুখোপাধ্যায় 

কোলকাতা (১৫ সেপ্টেম্বর '২২):- যে ইঞ্জিনিয়াররা সমাজ নির্মাণের অন্যতম কারিগর, যাঁদের উপস্থিতি ছাড়া কোনো নির্মাণ কার্যই কার্যত পূর্ণতা পেতে পারে না, সেই স্থাপত্যবিদদের অনুষ্ঠানে উদ্বোধক রূপে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কার্যত গরহাজির রইলেন 'কোলকাতা পৌরনিগম'-এর মেয়র তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নগরোন্নয়ন ও পৌর বিষয়ক বিভাগের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ওরফে ববি (Mayor, Kolkata Municipal Corporation as well as MIC Dept. of Urban Development & Municipal Affairs Firhad Hakim @ Boby)।
ফলতঃ, ক্ষতবিক্ষত হৃদয় ও অসম্মানের বোঝা মাথায় নিয়ে কোলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের ইঞ্জিনিয়াররা আজ পালন করলেন 'ইঞ্জিনিয়ার্স ডে' (Engineers' Day)।

প্রথিতযশা স্থাপত্যবিদ তথা ভারত রত্ন মোক্ষগুন্দম বিশ্বেশ্বরায়া (Bharat Ratna, Mokshagundam Visvesvaraya)-র জন্মদিন উপলক্ষ্যে ভারতে ১৫ সেপ্টেম্বর 'ইঞ্জিনিয়ার্স ডে' পালিত হয়ে আসছে।

পশ্চিমবঙ্গের সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন কার্যালয়ে কর্মরত ইঞ্জিনিয়াররা ২০১৫ সালের ৩০ অগস্ট কোলকাতায় তৈরী করেন 'প্রোগ্রেসিভ ইউনাইটেড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন' (Progressive United Engineers' Association)।
তারপর থেকে কোলকাতাতেও ১৫ সেপ্টেম্বর পালিত হচ্ছে 'ইঞ্জিনিয়ার্স ডে'।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী না এলেও 'প্রোগ্রেসিভ ইউনাইটেড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন' আয়োজিত 'ইঞ্জিনিয়ার্স ডে' নামাঙ্কিত আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মনোরঞ্জন সরকার, ফুটবল খেলোয়াড় অমিত ভদ্র, চিকিৎসক ইন্দ্রনীল বর্গী, কোলকাতা সিটি সেশন কোর্ট-এর মুখ্য বিচারক সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল সহ সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারগণ।
উদ্বোধকের আগমনের জন্য দীর্ঘক্ষণ কালাতিপাত করার পরেও উদ্বোধক না আসায় মঞ্চে উপস্থিত অন্য অতিথিবৃন্দ সমবেতভাবে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।


পরে স্বাগত ভাষণ দিতে গিয়ে আয়োজক সংস্থার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অনন্তকুমার নন্দী (General Secretary, Anantakumar Nandi) ক্ষোভের সাথে বলেন, "ভারতবর্ষ সহ এই পশ্চিমবঙ্গে যেখানে যে স্থাপত্যই সৃষ্টি বা উদ্বোধন হোক না কেন, সেখানে ভুল করেও স্থাপত্যবিদ বা যন্ত্রতত্ত্ববিদ কিংবা প্রযুক্তিবিদ যাদের সাধারণ ভাবে ইঞ্জিনিয়ার বলা হয়, তাঁদের অবদান তথা ভূমিকার কথা কখনোই স্মরণ করা হয় না।"

মঞ্চে যখন শ্রী নন্দী স্বাগত ভাষণ রাখছেন তখন মঞ্চের পেছনে সাজঘরে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে 'প্রোগ্রেসিভ ইউনাইটেড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন'-এর সেক্রেটারি জেনারেল সুব্রত ঘোষ (Secretary General, Subrata Ghosh) জানান, "এই মুহুর্তে হাওড়া, হুগলি, দঃ ২৪ পরগনার বিভিন্ন ক্ষেত্রের ইঞ্জিনিয়ার ভাই বোনেরা এখানে উপস্থিত রয়েছেন। 'কোলকাতা পৌরনিগম'-এর বিভিন্ন বিভাগে যতজন ইঞ্জিনিয়ার কাজ করেন তার ৯৮ শতাংশ আমাদের সংস্থার ছত্রছায়ায় চলে এসেছেন, এর পাশাপাশি 'পূর্ত বিভাগ'-এর শতকরা ৮০ ভাগ ইঞ্জিনিয়ার সহ 'পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন', 'সেচ ও জলপথ' সহ একাধিক বিভাগে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ারগণ ধীরে ধীরে আমাদের সংস্থার সাথে একত্রিত হচ্ছেন। আমরা আশা করি অদূর ভবিষ্যতে সারা পশ্চিমবঙ্গেই এই সংগঠন ছড়িয়ে পড়বে।"

সুব্রত ঘোষ-এর পাশে বসে সংস্থার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ সিংহ রায় (General Secretary Debraj Singha Ray) জানান, "শিক্ষক, পরিষেবিকা, চিকিৎসক প্রভৃতির মতো ইঞ্জিনিয়ারদের জন্যও একটা পৃথক দিন আগে থেকেই চিহ্নিত করা আছে, কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক সেই দিনটা নিয়ে কোথাও সেভাবে চর্চা হয় না। এই দিনটাকে মানুষের সামনে আনা ও ইঞ্জিনিয়ারদের সম্মান আদায়ের বিষয়কে মাথায় রেখেই আজ আমাদের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন।"

দেবরাজ সিংহ রায় পৃথকভাবে সাংবাদিকদের যখন একথা জানাচ্ছিলেন, তখন স্বাগত ভাষণ দিতে গিয়ে সংস্থার আর এক সাধারণ সম্পাদক অনন্তকুমার নন্দী বলছিলেন, "যে স্থাপত্যবিদরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সুরম্য অট্টালিকা হোক চাই সেতু নির্মাণের নকশা করেছেন বা প্রত্যক্ষ ভাবে দৈনন্দিন নির্মাণ কাজের প্রধান কাণ্ডারি ছিলেন তাঁর বা তাঁদের এই অসম্মান ও অমর্যাদা একেবারেই কাম্য নয়।
স্থাপত্যবিদদের সম্মান জানাতে যেদিন মাঠে ঘাটে হর্ষোল্লাসের সাথে 'ইঞ্জিনিয়ার্স ডে' পালিত হবে, সেদিনই আমাদের হৃত সম্মান পুনরুদ্ধার হবে।"

Comments