বেসরকারী ও সরকারী চিকিৎসকদের অপদার্থতায় মরতে বসেছিল এক সংখ্যালঘু যুবক

 


হীরক মুখোপাধ্যায় 

বারাসাত (১২ জুন '২২) :- চিকিৎসকদের অযোগ্যতা তথা অপদার্থতার খেসারত দিয়ে শরীরে কালাচ-এর বিষ নিয়ে দীর্ঘ সময় বিনা চিকিৎসায় পড়ে থেকে মরতে বসেছিল এক সংখ্যালঘু যুবক।
উত্তর ২৪ পরগনার শাসন থানার অধীন দক্ষিণ বহিরা-র ভাগ্যবন্তপুর-এর যুবক যখন ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে এগিয়ে চলেছিল, তখন চিকিৎসকেরা নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অনুভবের কাঁথায় আগুন দিয়ে, রোগীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ভেবেছিলেন- রোগী সম্ভবতঃ বদহজম সংক্রান্ত কোনো সমস্যায় ভুগছে।

রোগীর পরিবারের বক্তব্য:-

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা আতাউর রহমান (২২)-এর চাচা গিয়াসউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, "গত ৭ জুন স্থানীয় অঞ্চলের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে নিমন্ত্রণ খেয়ে ফিরেছিল আতাউর। রাত ৩ টে নাগাদ আচমকা ঘুম ভেঙে গেলে আতাউর দেখতে পায় একটা কালাচ সাপ তার শয্যা থেকে দ্রুততার সাথে সরে যাচ্ছে।
বুধবার সকাল থেকে আতাউর-এর বমি ও পায়খানা শুরু হয়। আতাউর ভেবেছিল সম্ভবতঃ বদহজম জনিত সমস্যার ফলে শরীরে অস্বস্তি হচ্ছে।
তাই ও প্রথমে স্থানীয় এক গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে যায়। কিন্তু ওঁনার ওষুধে খুব একটা কাজ না হলে ও পরে এমবিবিএস পাশ করা এক চিকিৎসকের কাছেও যায়।
চিকিৎসক রোগীর বদহজম ও অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতার কারণ পরীক্ষা করে দেখার জন্য বারাসাত কলোনি মোড় লাগোয়া এক ল্যাবরেটরিতে পাঠান।
কিন্তু সেখানে পরীক্ষা চলাকালীন আতাউর-এর শরীর আরো খারাপ হয়ে পড়লে তাকে বিকালের দিকে বারাসাত জেলা হাসপাতাল-এ নিয়ে আসা হয়।
বারাসাত সরকারী হাসপাতাল-এর চিকিৎসকের কাছেও আতাউর কখনো সাপে কামড়ানোর বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি। তাই সরকারী চিকিৎসকও ওই বিষয়ে কিছুই ভাবেননি।
বুধবার রাত দশটার দিকে সরকারী হাসপাতালের অধ্যক্ষ নিয়ম মাফিক ওয়ার্ড টহল দেওয়ার সময় আতাউরের শারীরিক অবস্থার অবনতি লক্ষ্য করে তার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন, এর পরেই শুরু হয় আতাউরের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা।"

অধ্যক্ষের বক্তব্য :-

সাংবাদিক সম্মেলনে বারাসাত জেলা হাসপাতাল-এর অধ্যক্ষ ডাঃ সুব্রত মণ্ডল জানিয়েছেন, "রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে আমার মনে হয়েছিল রোগীকে সম্ভবতঃ সাপে কামড়েছে। এর পর রোগীকে দ্রুততার সাথে আইসিইউ-তে স্থানান্তর করে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
রক্ত পরীক্ষার ফল আসতে তো একটা সময় লাগবেই, এদিকে রোগীর অবস্থা উত্তরোত্তর খারাপ থেকে খারাপতম হয়ে যাচ্ছিল।
ভেন্টিলেটরে অতিরিক্ত শয্যা না থাকায় রোগীকে ট্রলিতে শুইয়েই প্রথমে ১০ ইউনিট অ্যান্টি ভেনম প্রয়োগ করা হয়, পরে রোগীর উন্নতি বুঝে তাকে আরো ২০ ইউনিট অ্যান্টি ভেনম প্রয়োগ করা হয়। তারপর থেকেই রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছে।" 

কী হতে পারত :-

বেসরকারী ও সরকারী চিকিৎসকদের অযোগ্যতা তথা অপদার্থতার কারণে প্রথমতঃ, রোগী প্রকৃত চিকিৎসার অভাবে মারা যেতে পারত।
দ্বিতীয়তঃ, রোগী মৃত্যুর কারণে হাসপাতাল ভাঙচুর-এর সাথে সাথে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিগৃহীত ও লাঞ্ছিত হতেই পারতেন।

সামগ্রিক তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন একটাই, রোগী বা তার পরিবার অবুঝের মতো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের ভুলভাল তথ্য দিতেই পারেন, কিন্তু এতগুলো চিকিৎসক একসাথে একই ভুল করলেন কীভাবে !
চিকিৎসকদের অযোগ্যতায় কেন একজন সাপে কামড়ানো রোগী উচিত সময়ে প্রাণদায়ী উচিত পরিষেবা পাবেন না !

Comments